বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০

কওমী বনাম আলিয়া মাদ্রাসার দ্বৈরথ


কওমী বনাম আলিয়া মাদ্রাসার যে দ্বৈরথ তা আলোচনার আগে একটু বলে রাখা ভাল আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আসলে কি ছিল? এটা জানা কথা যে আলিয়া মাদ্রাসা ইংরেজদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। চলুন একটু ইতিহাস ঘেটে দেখি।

ইতিহাস বলছে দাপ্তরিক ভাবে মাদ্রাসা-ই-আলিয়া নামে পরিচিত এই মাদ্রাসা ১৭৮০ সালে বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের গর্ভনর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিসং কর্তৃক কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ শাসনের প্রাথমিক পর্বে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো প্রচলিত ফার্সি ভাষায় রচিত আইন অনুসারে। এ কারণে প্রশাসনের জন্য, বিশেষ করে বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজন ছিল আরবি, ফার্সি ও বাংলা ভাষায় দক্ষতা।

এ ছাড়া মুসলিম আইনের ব্যাখ্যা ও মামলায় রায় দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল অনেক মৌলভী ও মুফতির। একই সঙ্গে মৌলভী ও মুফতিদের ইংরেজি ভাষায় জ্ঞান থাকারও প্রয়োজন ছিল। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস মুসলমানদের জন্য একটি মাদ্রাসা ও হিন্দুদের জন্য একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। 

এই প্রসঙ্গে মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমীর 'হাদিসের তত্ত্ব ও বিশ্লেষণ' বইয়ে তিনি বলেন, 'ইংরেজরা ভারতবর্ষে আসার পরপরই এই ভূখণ্ডের ভাষা, আইন, ঐতিহ্য বদলে ফেলতে পারেনি। তাই তাদের অনুগত আরবি ফারসি শিক্ষিত কিছু আমলার প্রয়োজন ছিল, যাদেরকে কেরানি, দলিল-দস্তাবেজের অনুবাদক ইত্যাদি পদে নিযুক্ত করা যাবে।'

প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম হেড ছিলেন মাওলানা মাজদুদ্দীন। ১৭৮১ থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত আলিয়া মাদ্রাসা ‘বোর্ড অব গভর্নরস’ দ্বারা এবং ১৮১৯ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ইংরেজ সেক্রেটারি ও মুসলমান সহকারি সেক্রেটারির অধীনে পরিচালিত হয়। ১৮৫০ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি হলে ড. এ. স্প্রেংগার মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৮৫০ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত ইংরেজ কর্মকর্তাগণ এ পদে ছিলেন। ১৯২৭ সালে শামসুল উলামা খাজা কামালউদ্দীন আহমদ সর্বপ্রথম এ মাদ্রাসায় মুসলমান অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

কলকাতা মাদ্রাসা শুরু থেকেই ফিরিঙ্গি মহলের প্রখ্যাত আরবি স্কুল ‘দারসে নিযামিয়া’র মডেল অনুসরণ করে পাঠদানের কোর্স প্রণয়ন করে। ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসার পাঠক্রমে ফার্সি ভাষা মুখ্য স্থান দখল করে। ত্রৈরাশির দ্বৈত নিয়ম অর্থাৎ অনুপাত ও সমানুপাত পর্যন্ত গণিত শেখানো হতো এবং ইউক্লিডের শুধু একটি পাঠ পড়ানো হতো। অ্যারিস্টটলের পুরনো দার্শনিক মতের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনের কোর্সসমূহ পড়ানো হতো।

১৮২৯ সালে আলিয়া মাদ্রাসায় ইংরেজি বিভাগ খোলা হয়। ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৩৪ বছরে এ বিভাগে ১৭৮৭ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করেন। এঁদের মধ্যে নওয়াব আবদুল লতিফ ও সৈয়দ আমীর আলী বিশেষ কৃতিত্ব লাভ করেন। ১৮৬৩ সালে কলকাতা মাদ্রাসায় এফ.এ পর্যায়ের ক্লাস সংযোজিত হয়। ১৮৫৪ সালে মাদ্রাসায় একটি পৃথক ইনস্টিটিউট হিসেবে ইঙ্গ-ফারসি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ভর্তির সময় শরাফতনামা (উচ্চ বংশে জন্মের সনদপত্র) এর উপর জোর দেওয়া হতো। 

ইংরেজি এবং ফারসি ভাষায় শিক্ষাদানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ইঙ্গ-ফারসি বিভাগের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলা। ইঙ্গ-ফারসি বিভাগ মুসলিম অভিজাতদের মধ্যে তেমন আগ্রহ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়। ১৮২১ সালে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মাদ্রাসায় প্রথাগত পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৮৫৪ সালের শিক্ষাসংক্রান্ত ‘ডেস্পাচ’-এ কলকাতা মাদ্রাসাকে প্রস্তাবিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে আসার ইঙ্গিত থাকলেও মাদ্রাসাটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়নি। ১৯০৭ সালে মাদ্রাসায় তিন বছর মেয়াদি কামিল কোর্স চালু হয়।

১৯৪৭ সালে আলিয়া মাদ্রাসা কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। ঢাকায় আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক। ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে নজরুল কলেজ)-এ মাদ্রাসার কার্যক্রম চলতে থাকে। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান ১৯৫৮ সালের ১১ মার্চ ঢাকার বখশীবাজারে মাদ্রাসার চারতলাবিশিষ্ট নতুন ভবন ও ছাত্রাবাসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৬১ সালে মাদ্রাসা লক্ষ্মীবাজার থেকে বখশীবাজারে স্থানান্তরিত হয়। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন খান বাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক। এই তথ্যগুলো বাংলাপিডিয়াতে লিখেছেন আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী।

অনেকেই বলেন ইংরেজরা আলিয়া মাদ্রাসা কেন প্রতিষ্ঠিত করলো? উত্তরে বলা হয়, মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, ইংরেজদের চাকর করে রাখার জন্য, মুসলিমরা যাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই না করে সে জন্য ইত্যাদি ইত্যাদি। কিছু সময়ের জন্য যদি এগুলো মেনে নেয়াও হয় আমি বলবো ইংরেজদের এই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। কারণ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পরই আইন আদালতের ভাষা হিসেবে আরবি ফারসির বদলে ইংরেজি ভাষা স্থান পায়। ফলে আলিয়া মাদ্রাসা হতে ইংরেজরা তত্ত্বাবধান উঠিয়ে নেয়। এই স্বাধীনতা পাওয়ার ফলেই আলিয়া দ্বারা যেই ধর্মীয় ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল, তা আর হয়নি। 

যখন হিন্দুরা ইংরেজি শিখে দলে দলে ইংরেজ সরকারের যোগ দান করছিলো, মুসলিমরা তখন একদিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই (তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা, নীল বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, হাজী শরীয়তুল্লাহ-এর ফরায়েজী আন্দোলন) করছিলো, আরেকদিকে মাদ্রাসা থেকে ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি ইংরেজি শিখে মুসলিমরাও সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়ে। কোনো লড়াইয়ে যেন পিছে না পড়ে তাই দুই দিক থেকেই (জ্ঞানের দিক ও ময়দানে যুদ্ধ) মুসলমানরা ভূমিকা রাখে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আলিয়া মাদ্রাসা থেকে পরবর্তীকালে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ধর্মে নেতৃত্ব দেয়ার মতো অনেক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়। কয়েকজনের নাম উল্লেখ করছি, নওয়াব আবদুল লতিফ, সৈয়দ আমীর আলী, সৈয়দ আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী, আবদুর রহমান কাশগরী, মৌলানা আকরম খাঁ, মওলানা মুহিউদ্দিন খান, অধ্যাপক আখতার ফারুক, অধ্যাপক আবদুল্লাহ, শওকত উসমান (প্রসঙ্গত বলে রাখি তার 'ক্রীতদাসের হাসি' বইটার জন্ম কিন্তু এই মাদ্রাসা থেকে আরবি শেখার ধরুনই দিতে পেরেছেন), জহির রায়হান, তার ভাই শহিদুল্লাহ কায়সার, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, অধ্যাপক আবুল হাশেম, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রমুখ ব্যক্তিগণ। 

যাইহোক, আলিয়া মাদ্রাসার সাথে জেনারেল শিক্ষার খুব একটা পার্থক্য  নেই। জেনারেল শিক্ষার সকল বিষয়ই আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ানো হয়, তবে আলিয়া মাদ্রাসায় বাড়তি হিসেবে কুরআন, হাদীস, ফিকহ, আরবীসহ আরও কিছু ধর্মীয় কিতাবাদি পড়ানো হয়। আলিয়া মাদ্রাসা আর জেনারেল শিক্ষার সার্টিফিকেটের মান একই। আলিয়াতে এসএসসি ও এইচএসসিকে যথাক্রমে দাখিল ও আলিম বলা হয়। আর ডিগ্রিকে ফাযিল এবং মাস্টার্সকে কামিল বলা হয়। বেশির ভাগ আলিয়া মাদ্রাসাই আবাসিক ও অনাবাসিক পদ্ধতিতে চলে। সম্পূর্ণ আবাসিক ও ডে-কেয়ার পদ্ধতি খুব কমই আছে। 

এবার আসি কওমি মাদ্রাসার আলোচনায়। কওম শব্দের অর্থ জাতি। কওমী মানে জাতীয় শিক্ষা। মুসলমান জনসাধারণের ব্যাপক সহযোগিতায় এই ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হত তাই এই নাম রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে কওম তথা জাতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। আলিয়া মাদ্রাসা যেখানে ধীরে ধীরে ইসলামকে ব্রিটিশদের বেঁধে নেয়া নীতির আলোকে সাজাতে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ ওঠে বারংবার, তার বিপরীতে কওমী মাদ্রাসা একেবারেই ভিন্ন স্রোতের যাত্রী। 

ইতিহাস বলছে কওমী ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ নামক স্থানে। তখন প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল “আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ”। কাসেম নানুতুবী (র) এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বেও ছিলেন।  শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত, পাকিস্তানেও কওমি মাদ্রাসা বহুল প্রচলিত। ভারত উপমহাদেশের পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। তবে উপমহাদেশের বাইরে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সাধারণত দারুল উলুম বা “দেওবন্দি মাদ্রাসা” নামে পরিচিত। 

কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা সিলেবাস প্রাচীন শিক্ষাধারার অনুগামী। বলা হয় কওমী শিক্ষার জীবনকাল ষোল বছর। ১৬ বছরের এই শিক্ষায় পড়ানো হয় কোরআন, হাদিসের পাশাপাশি আরবি, ফারসি ভাষা। ইসলামী আইন, তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, প্রাচীন গ্রীক তর্কবিদ্যা (মানতেক), দর্শন (ফালসাফা) ইত্যাদি। এই প্রাচীন গ্রন্থগুলো বোঝা কিছুটা কষ্টসাধ্য। একসময় হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি (মাখতুতা) পড়ানো হত। ফলে এসব বিষয় অনেক উচ্চাঙ্গের হলেও সবাই এর দ্বারা উপকৃত হতে পারতো না। খোদ কাসেম নানুতুবী রা. এর উর্দু গ্রন্থগুলোই অনেকেই বুঝতে পারতো না। 

তবে দিনে দিনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, এখন কওমী মাদ্রাসায় ইংরেজি, গণিতের মতো বিষয়গুলো পড়ানো হয়। এতদিন কওমী মাদ্রাসায় পড়ে সরকারী কোনো চাকরী করা না গেলেও গতবছর কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে স্নাতকোত্তর সমমান ঘোষণা দেয়ার পর তারা সরকারী চাকরীতে যোগ দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। 

তবে এই নিয়ে নানা মহল থেকে তা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, এই নিয়ে কওমীদের মধ্যেও পক্ষে বিপক্ষে কথা হচ্ছে। কারণ কওমীদের জন্ম হয়েছিলো ইসলামের মূল জ্ঞান দেয়ার জন্য, জনগণের সাহায্যে পরিচালিত হয়ে ইংরেজদের ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করার জন্য। আবার অনেকে এর পদ্ধতিগত গলদের কথা বলছেন। কারণ জেনারেল বা আলিয়া মাদ্রাসার একজন ছেলে এসএসসি/দাখিল, এইচএসসি/আলিম এবং ডিগ্রি পাশ করে যে সার্টিফিকেট পাবে, কওমী থেকে পড়ে ঐ সকল পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষা দিয়ে একই সার্টিফিকেট পাবে। চাকরীর বাজারের শর্তাবলীর বিচারে এই সার্টিফিকেট অকেজো বিবেচিত হবে। তাই বিভিন্ন মহল থেকে সুষ্ঠু ও সম-পদ্ধতি চালুর দাবী তুলেছেন।

তবে কওমী কর্তৃপক্ষ এখনো বলছেন ইসলামের শিক্ষাই তাদের মূল লক্ষ্য, তবে পাঁচটি ভাষার শিক্ষা দেওয়া হবে– বাংলা, ইংরেজি প্রাথমিক পর্যায়ে, উচ্চস্তর পর্যায়ে আরবি, উর্দু এবং ফারসি। কওমী মাদ্রাসা সম্পূর্ণ আবাসিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। 

এবার আসি দ্বৈরথের কথায়, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মেনে ইহকালীন সমৃদ্ধি ও পরকালীন মুক্তির জন্য এই দুই শিক্ষা ব্যবস্থাই অতীব জরুরী। একটার চেয়ে আরেকটাকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নাই, পরস্পরের মধ্যে কোনো রথ বা যুদ্ধও নাই। কিন্তু কিছু অতি-উৎসাহী মানুষ হিংসাত্মক মানসিকতা থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত সমালোচনা করে। আমি দুপক্ষের সমালোচনাই তুলে ধরছি।

কিছু কিছু কওমী কট্টরপন্থীদের ভাষ্য,
আলিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতাই খ্রিষ্টান এবং প্রথম অধ্যক্ষও খ্রিষ্টান। আর এই জন্যই আলিয়া মাদ্রাসার অবস্থা ইংরেজ টাইপের। কারণ ইংরেজরা তাদের সবকিছু সুবিধামত সাজিয়েছে। আলিয়া শিক্ষিতদের ঈমান দুর্বল, আমল কম। কওমী মাদ্রাসায় যা পড়ানো হয় আলিয়া তার ধারকাছেও নাই। কওমী মাদ্রাসার ক্লাস সেভেনের একজন ছাত্র যে হাদীস সুন্নাত জানবে, আলিয়ার আলিমের একজন তা জানবে না। কওমী মাদ্রাসা সবদিক থেকে এগিয়ে ইত্যাদি ইত্যাদি।

অপরদিকে আবার কিছু কট্টর আলিয়াপন্থীরা ভাষ্য হচ্ছে,
কওমীরা গোড়া, এদের দুনিয়াবী কোনো জ্ঞান নেই। এরা দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, এরা আধুনিক নয়। এরা কেবল মানুষের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া, মসজিদে ঈমামতি করা আর পান খাওয়া ছাড়া কিছুই পারে না। এদের দিয়ে মুসলিম জাতি যে শ্রেষ্ঠ জাতি তার প্রমাণ হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে, সরকার কওমী মাদ্রাসার দাওরায় হাদীসকে মাস্টার্সের মান দেয়ার আগে, সরকারি চাকরীর আশায় বেশির ভাগ ছাত্ররাই কওমীতে পড়ার পাশাপাশি আলিয়াতে ভর্তি হয়ে দাখিল ও আলিম পরীক্ষা দিতেন কেবল সার্টিফিকেটের জন্য। আলিয়াকে ঘৃণা করলেও, দুনিয়ার জন্য আলিয়াকেই সিড়ি বানাতেন, এখানে অবশ্য আলিয়া শিক্ষা ব্যবস্থার গলদই বলবো আমি। 

যাইহোক, কারোর অভিযোগই ফেলে দেয়ার মতো নয় যেমনি, তেমনি আবার সব কথা সত্য নয়, এগুলো স্রেফ বাড়াবাড়ি। আমি কোনো কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি পছন্দ করি না। এগুলো ইসলামের শিক্ষা না। ইসলামের জন্য কওমীর যেমন অবদান আছে, আলিয়ারও তেমন অবদান আছে। কেউ কারো থেকে বড় বা ছোট নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় অবদান রাখা ছাড়া যেমন ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা যাবে না, ঠিক তেমনি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা লাভ করে জীবনে বাস্তবায়ন করতে না পারলে আখিরাতে মুক্তি পাওয়া যাবে না। খুব করে চাই কওমী-আলিয়ার দ্বন্দ্ব নিরসন হোক। জাতির এই ক্লান্তিলগ্নে কওমী ও আলিয়া নিয়ে দলাদলি না করে আলেম সমাজের ঐক্য অতীব প্রয়োজন।

আলিয়া ও কওমী শিক্ষকদের সম্পর্কে একটু গভীর থেকে জানতে জনাব ড. আব্দুস সালাম আযাদী সাহেবে নিচের লেখাটি পড়তে পারেন। আমার দেখা কওমি ও আলিয়া মাদরাসার উস্তায

Share:

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচিত পোস্ট

এক অভাগিনীর গল্প শুনি

মা-বাবার প্রথম সন্তান হয়ে দুনিয়ায় আসা শ্যাম বর্ণের মেয়েটির শৈশব, কৈশোর কাটে নানা গঞ্জনায়। যৌবনে পা দিতে দিতেই দেশে যুদ্ধ বেধে যায়। সে এ...

সংগ্রহশালা

আমাকে লিখুন

নাম

ইমেল *

বার্তা *