সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০২০

বাংলাদেশের সাথে তুরস্কের ঈদ উদযাপনের রকমফের


আমাদের সাথে তুরস্কের ঈদ উদযাপনের ব্যতিক্রমগুলো চোখে পড়ার মতো। এই যেমন শুরুতেই ঈদের নামাজের কথায় আসি-

১.

পুরো দেশ জুড়ে একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঈদের নামাজ পড়া হয়। যা ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে ঠিক করে দেয়া হয়। আর এই সময়টা বরাবরই ফজরের কিছুক্ষণ পর হয়। এবার আঙ্কারায় ঈদের নামাজের নির্ধারিত সময় ছিলো ৬.১৯ মিনিটে। ঠিক নির্ধারিত সময়েই আঙ্কারার সকল মসজিদে নামাজ শুরু হয়েছে। একটু আগেও না, পরেও না।

২.

তারপর আসি পশু কুরবানির বেলায়, এরা বাড়ি বাড়ি বা শহরের ভিতরে কেউ পশু জবেহ করে না। প্রতিটি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ শহরের বাহিরে নির্দিষ্ট একটি জায়গা তৈরি করে রাখে, যেখানে সবাই একসাথে পশু কুরবানী দেয়।

কুরবানী দেয়ার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে জবেহ করে কাটাকুটি পর্যন্ত অত্যাধুনিক মেশিনে প্রশাসনের লোকজন করে দেয়। নিজেরা উপস্থিত থেকে দেখভাল করে, আর ছোট বকরী হলে নিজেরা জবেহ করে ব্যবস্থাপনা করে।

তবে নিজেরা উপস্থিত থাকার সংখ্যাটা খুবই কম। অধিকাংশ কুরবানিদাতারাই বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে কুরবানী দেয়। অর্থ্যাৎ এরা টাকা দিয়ে দেয়, যার নামে কুরবানী হয়ে তার নাম পাঠিয়ে দেয়, ভাকফিগুলো (সংস্থা) কুরবানী করে মাংশগুলো বাসায় পাঠিয়ে দেয়।

৩.

আমাদের দেশের সাথে তুরস্কের ঈদ উদযাপন কিংবা যেকোনো উৎসব পালনের বড় একটি পার্থক্য হচ্ছে, ঈদের দিন থেকে পরবর্তী তিনদিন পর্যন্ত এখানে শহরের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সম্পূর্ণ ফ্রি থাকে। আপনি শহরের ভিতরে যেখানেই যাবেন বাস বা মেট্রোতে কোনো ভাড়া লাগবে না। যেখানে আমাদের দেশে ঈদ আসলেই ভাড়া ডাবল হয়ে যায়। পারলে তো পকেট কেটে নেয়, টানা এক সপ্তাহ পর্যন্ত।

৪.

আমাদের দেশে ঈদ আসলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু তুরস্কে ঈদকে কেন্দ্র করে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়তে দেখা যায় না। উল্টো গতকাল ঈদের বাজার করতে গিয়ে তেলসহ কয়েকটি পণ্যের দাম আগের চেয়ে কমে পেয়েছি।

৫.

ঈদে আমাদের দেশে যেভাবে ধনী-গরীব সবাই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে কুরবানিদাতারা অন্যদেরকে গোস্ত উপহার পাঠায়। ঠিক এই কাজের জন্য এদেশে শত শত দাতব্য সংস্থা (ভাকফি, দেরনেক) কাজ করে। তারা কুরবানির অনেক আগে থেকে অর্থ সংগ্রহ করে, কুরবানি দেয়। এবং তা গরীব-মিসকিন থেকে শুরু করে বিদেশী শিক্ষার্থী ও বিদেশী পরিবারগুলোতে বিতরণ করে। এমনকি বিভিন্ন দেশেও পাঠায়।

৬.

তবে এটা সত্য, আমাদের দেশের ঈদে যে নির্মল আনন্দ পাওয়া যায়, তা এখানে দেখা যায় না। কি কুরবানির ঈদ আর কি রোজার ঈদ। এরা বাসা থেকে খুব একটা বের হয় না। তবে বিদেশী শিক্ষার্থীরা ঈদের দিন সবাই একসাথ হয়, খাওয়া-দাওয়া করে, আড্ডা দেয়, ঘুরাঘুরি করে দেশের স্বজনদেরকে ভুলে থাকার বৃথা চেষ্টা করে।

কারণ ঈদের দিনে পশু জবেহ দিয়ে সবাই মিলে গোস্ত কাটাকুটি করে চালের রুটি দিয়ে মাংশ খাওয়ার মজা কি আর সারাদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কিংবা বিকেলে কিছু সময় আড্ডা দিয়ে বা দেশে ফোনে কথা বলে পাওয়া যায়?

Share:

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচিত পোস্ট

এক অভাগিনীর গল্প শুনি

মা-বাবার প্রথম সন্তান হয়ে দুনিয়ায় আসা শ্যাম বর্ণের মেয়েটির শৈশব, কৈশোর কাটে নানা গঞ্জনায়। যৌবনে পা দিতে দিতেই দেশে যুদ্ধ বেধে যায়। সে এ...

সংগ্রহশালা

আমাকে লিখুন

নাম

ইমেল *

বার্তা *